হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমাম খোমেইনী (রহ.) তাঁর গতিশীল ফিকাহ, বিপ্লবী রাজনীতি এবং ইসলামী নৈতিকতার সমন্বয়ের মাধ্যমে শুধু ইরানে নয়, বরং গোটা বিশ্বের প্রতিরোধ আন্দোলনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন। আজ তাঁর পথ অনুসরণ করতে হলে সময়ের প্রেক্ষিতে নতুন বাস্তবতার ভিত্তিতে মূলনীতি অক্ষুণ্ন রেখে ইজতেহাদ করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি ইমাম খোমেইনী (রহ.)-কে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারূপে কীভাবে উপস্থাপন করবেন? তাঁর নৈতিক ও নেতৃত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো কী?
ইমাম খোমেইনী (রহ.) ছিলেন এমন এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, যিনি একদিকে ছিলেন ধর্মীয় ফতোয়া প্রদানের যোগ্যতা-সম্পন্ন একজন বড় মাপের আলেম এবং অন্যদিকে ছিলেন দক্ষ রাজনৈতিক নেতা।
তাঁর নৈতিক বৈশিষ্ট্য:
তাকওয়া ও সাধাসিধে জীবনযাপন (একটি জুহদপূর্ণ জীবনের আদর্শ)
সাহসিকতা ও স্থিতিশীলতা (পাহলভী শাসন ও আন্তর্জাতিক চাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ)
নিঃস্বার্থতা ও জনবান্ধব মনোভাব (বঞ্চিতদের সেবা দেওয়ার উপর গুরুত্ব)
তাঁর নেতৃত্বগুণ:
দূরদর্শিতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা (যেমন ৫৯৮ নম্বর প্রস্তাব গ্রহণের সময়কার কৌশলী দৃষ্টিভঙ্গি)
নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে স্থির থেকে সময়োপযোগী নমনীয়তা (ঐতিহ্যবাহী ফিকাহ ও আধুনিক চাহিদার সংমিশ্রণ)
প্রশ্ন: কী কারণে ইমাম খোমেইনী (রহ.) স্বৈরতন্ত্র ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠলেন? তাঁর ভূমিকা কী ছিল ইসলামী জাগরণে?
সাহসী ভাষণ (যেমন ১৯৬৩ সালে ক্যাপিটুলেশন আইনের বিরোধিতা), নির্বাসন ও বিদেশ থেকে বিপ্লব পরিচালনা
মুসলিমদের ঐক্য বজায় রাখার প্রচেষ্টা ও বিভাজন সৃষ্টিকারী উপনিবেশবাদবিরোধী অবস্থান
আধুনিক যুগে ধর্মীয় সরকার গঠনের বাস্তবতা তুলে ধরা — যা হিজবুল্লাহ, ইসলামিক জিহাদ ইত্যাদি আন্দোলনে প্রভাব ফেলেছে
প্রশ্ন: “বেলাইয়াতে ফকিহ” বা ধর্মীয় নেতার কর্তৃত্বের ধারণা ইমাম খোমেইনীর চিন্তায় কী স্থান পেয়েছে এবং তা কীভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করেছে?
ইমাম (রহ.) বিশ্বাস করতেন, ইনসাফপরায়ণ ও যোগ্য ফকিহের নেতৃত্বে সমাজ পরিচালনা করা উচিত — বিশেষ করে ইমাম মাহদীর (আ.) অনুপস্থিতিতে। এই নীতির ভিত্তিতেই গঠিত হয় ইসলামী প্রজাতন্ত্র:
জনগণের অংশগ্রহণ (গণতন্ত্র)
ধর্মীয় নেতৃত্বের তত্ত্বাবধান (ইসলামি বৈশিষ্ট্য)
এবং এই নেতৃত্ব অবশ্যই ন্যায়পরায়ণতা, তাকওয়া ও জনদায়িত্বের উপর ভিত্তি করে হতে হবে।
প্রশ্ন: ইমাম খোমেইনী (রহ.) বৈশ্বিক ইস্যু যেমন জায়োনিজম ও সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন? এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু?
তিনি জায়োনিজমকে বলেছিলেন "ক্যান্সারের টিউমার"
ফিলিস্তিন দখলের জন্য পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদকে দায়ী করতেন
তিনি আমেরিকা ও পশ্চিমের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আধিপত্যের বিরোধিতা করতেন
তাঁর "নাফিয়ে সাবীল" তত্ত্ব (অমুসলিমদের আধিপত্য অগ্রহণযোগ্য) আজও উপনিবেশবাদবিরোধী প্রতিরোধে কার্যকর
প্রশ্ন: ইমাম খোমেইনী (রহ.) কেন সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার উপর এত জোর দিতেন? এ নিয়ে তাঁর উদ্বেগ আজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ইমাম খোমেইনী বিশ্বাস করতেন, পশ্চিমা সংস্কৃতি গণমাধ্যম, শিক্ষা ও জীবনধারার মাধ্যমে ইসলামী পরিচয়ে হস্তক্ষেপ করছে। এর প্রতিরোধে তিনি আহ্বান জানান:
আত্মবিশ্বাস জাগানো
ইসলামী জ্ঞান উৎপাদন
সংস্কৃতি থেকে পশ্চিমা উপাদান দূরীকরণ
আজকের ডিজিটাল যুগ ও সফট ওয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষিতে এসব উদ্বেগ আরও বেশি জরুরি।
প্রশ্ন: কেন অনেকে ইমাম খোমেইনী (রহ.)-কে "ইসলামী বিপ্লবের স্থপতি" বলেন? তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান কী ছিল ইরান ও বিশ্ব ইসলামের জন্য?
পশ্চিমপন্থী শাসন ব্যবস্থার পতন
ইসলামভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা
জাতীয় মর্যাদা ও শক্তির পুনর্গঠন
প্রতিরোধের বয়ান পুনরুজ্জীবিতকরণ (যেমন ইসরাইলবিরোধী আন্দোলন)
ইসলামের সমাজ পরিচালনায় সক্ষমতা প্রমাণ
ফিলিস্তিনের ইন্তিফাদা সহ বিভিন্ন মুক্তি আন্দোলনে অনুপ্রেরণা দান
প্রশ্ন: আজ, ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ওফাতের পর, কীভাবে আমরা তাঁর পথ ও চিন্তাধারা ধরে রাখতে পারি? তরুণেরা তাঁর জীবন থেকে কী শিক্ষা নিতে পারে?
প্রায়োগিক কার্যক্রম:
ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয় পদক্ষেপ
বিশ্ব রাজনীতির নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি
নৈতিক শিক্ষা:
বস্তুবাদ পরিহার ও আধ্যাত্মিকতায় মনোযোগ
সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা (যেমন তরুণদের জ্ঞানচর্চা ও জিহাদি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ)
পাঠ্যাভ্যাস:
ইমামের রচনাগুলি, বিশেষ করে “সাহিফায়ে নূর” অধ্যয়ন করে তাঁর চিন্তাকে গভীরভাবে অনুধাবন করা
আপনার কমেন্ট